গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে উখিয়া উপজেলার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির-৪ এ দাতা সংস্থা অক্সফ্যাম বাংলাদেশের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় মুক্তি কক্সবাজার কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন Our Light, Our Protection, Our Responsibility প্রকল্পের আওতায় সোলার লাইট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের ওপর ১২০ ঘন্টার দক্ষতা-উন্নয়ন প্রশিক্ষণ সফলভাবে সমাপ্তকারীদের মাঝে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রকল্প সমন্বয়কারী গাজী আসাদুজ্জামান এর সঞ্চালনায় সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব বিমল চন্দ্র দে সরকার, প্রধান নির্বাহী মুক্তি কক্সবাজার। সনদ বিতরণী উদ্বোধনী বক্তব্যে সভাপতি প্রকল্পের উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, “প্রশিক্ষণে যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা নিজের কমিউনিটির সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে পাশাপাশি নিজেরা নিজেদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে বলে আমরা আশা রাখি।” তিনি আরো বলেন যে, কমিউনিটির সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং তাদের সাথে প্রাইভেট সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের সংযুক্তকরণের মাধ্যমে এ কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোহাম্মদ দিদারুল আলম, ক্যাম্প ইন-চার্জ, এফডিএমএন ক্যাম্প-৩ এবং ৪। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব আবুবক্কর ছিদ্দিক, সহকারী ক্যাম্প ইন-চার্জ, জনাব আদিল আহাম্মদ, সহকারি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট অফিসার- শেল্টার—সিসিসিএম সেক্টর, দাতা সংস্থা অক্সফ্যাম বাংলাদেশ এর প্রোটেকশন টিম লিডার মোঃ হাফিজুর রহমান এবং এনার্জি এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক ফোকাল মেহেদি হাসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন যে, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সোলার লাইট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি জনবল তৈরী হলো, ফলে সঠিক সময়ে মেরামতের মাধ্যমে সোলার লাইটসমূহের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে যা শরণার্থী শিবিরের জন্য খুবই জরুরী ছিলো। পাশাপশি, প্রশিক্ষণ সফলভাবে সমাপ্তকারীদের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে যা তাদের পারিবারিক ও আর্থিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে। তিনি আরো বলেন, "কমিউনিটির জনগণের মধ্যে সোলার লাইটের মালিকানা ও দায়িত্ববোধ তৈরি করা জরুরি যাতে তারা বুঝতে পারে এই লাইট তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে।" তিনি প্রশিক্ষণ আয়োজনের জন্য মুক্তি কক্সবাজার ও অক্সফ্যাম বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
জনাব আবুবক্কর ছিদ্দিক প্রশিক্ষণগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা প্রশিক্ষণ থেকে অর্জিত জ্ঞানকে যথাযথভাবে ব্যবহার করলে নিজের এবং সমাজের জন্য খুবই উপকার হবে।” আদিল আহামদ বলেন— আমি এই মহতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি এবং এই প্রশিক্ষণ কমিউনিটির জন্য সম্পদ হিসাবে পরিণত হলো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, সবাইকে নিজের লাইট ও নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিজের দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে এবং এটা করলে প্রশিক্ষণ সার্থক হবে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে সাইফুল ইসলাম সকলের সামনে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “আমি এখানে সোলার লাইট পরিপূর্ণভাবে মেরামত করা শিখেছি এবং কমিউনিটির সুরক্ষার জন্য লাইট কেন প্রয়োজন সেটার গুরুত্বও বুঝেছি। ট্রেনিং এর পূর্বে মনে করতাম এটা শুধু আলোর জন্য দিয়েছে, কিন্তু আসলে সোলার লাইট গুলো আমাদের সুরক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছে।”
প্রশিক্ষণার্থী রেহেনা সোলার লাইট মেরামতের জন্য কি কি সেফটি উপকরণ ব্যবহার করতে হবে, ব্যাটারি ও লাইট ভালো না খারাপ তা যাচাই ও মেরামতের নিয়ম সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে সকলের সামনে উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথিবৃন্দ প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদ তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি, প্রকল্পের বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং প্রাইভেট সেক্টরের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, এ প্রকল্পের আওতায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির-৩, ৪, ১২, ১৯, ২২ এবং টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মোট ২৫ জন (নারী-৩ জন এবং পুরুষ-২২ জন) উপকারভোগীকে এই প্রশিক্ষণ প্রদান ও সনদ প্রদান করা হয়েছে।