২৫ই নভেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে মুক্তি কক্সবাজার কতৃর্ক বাস্তবায়নাধীন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার অব ইয়াগামাটা (আইভিওয়াই-জাপান) এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগীতায় পরিচালিত Enhancing Market Access for Small-scale Farmer's (EMASF) in Hilly and Mountainous Areas in Teknaf, Cox's Bazar প্রকল্পের উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে সবজির জয়েন্ট শিপমেন্টের (যৌথ ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রির উদ্যোগ) উপর দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ হল রুমে অনিুষ্ঠিত উক্ত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মুক্তি কক্সবাজারের EMASF প্রকল্পের সমন্বয়কারী মোঃ ওসমান গনি। উক্ত কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৩ জন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ২ জন এনজিও প্রতিনিধি, ৮ জন হোল সেলার এবং কৃষক দলের ১৯ জন দল নেতা। উক্ত কর্মশালায় মোট ৩২ জন অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল অত্র এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরনের গুরুত্ব অনুধাবন করা, বাধাসমূহ ও সুযোগগুলো চিহ্নিত করা এবং এ বিষয়ে কার্যকরী কৌশলগুলো স্থির করা। টেকনিক্যাল অফিসার-মার্কেটিং, জনাব আব্দুর রহিম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের লক্ষ্যভুক্ত উপকারভোগীগণ কিভাবে তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি বাজারজাত করছে তার একটা বিস্তারিত উপস্থাপনা করেন।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২৫০টি পরিবারকে সবজি উৎপাদনের উন্নত কলাকৌশল, মানসম্পন্ন বীজ, সিডলিং ট্রে, কোকোপিট, সাধারণ কম্পোষ্ট এবং ভার্মি-কম্পোষ্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে কাংখিত সব্জি উৎপাদন করে যাচ্ছে। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সিএনআরএস এর প্রতিনিধি ওসমান গনি বলেন যে, গ্রুপ মার্কেটিং কার্যকর হলেও এটি পরিচালনা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গ্রুপ মার্কেটিংয়ে গ্রুপ লিডাররাই মূল অংশীদার। তিনি আরও বলেন, মূল্য নির্ধারণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তবে এটি গ্রুপ লিডারদের সততা ও ধৈর্যের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। তিনি আনন্দিত হয়ে বলেন যে, আমাদের যে পথচলা শুরু হয়েছে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। সুশীলনের প্রতিনিধি রেজাউল করিম বলেন যে, তাঁরা এ ধরণের বাজার ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে চান এবং বলেন, “মুক্তি কক্সবাজার ও সুশীলন যৌথভাবে বিপণন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করতে পারে।” রইক্ষ্যং বাজারের একজন পাইকার নরুল কবীর তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনাপূর্বক বলেন, “আমরা প্রায়ই এমন ফোন পাই যেখানে বলা হয় তাঁদেরকে পণ্যবাহী গাড়ি পাঠাতে, কিন্তু পণ্যের পরিমাণ এত স্বল্প থাকে যে পরিবহন খরচ উঠানো সম্ভব হয় না।” রইক্ষ্যং বাজারের আরেক পাইকার ওসমান গনি অগ্রিম পণ্য বিক্রির তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন যে, আগে আমরা কৃষকদের কাজ সহজ করতে অগ্রিম টাকা দিতাম, কিন্তু কৃষকরা কথা রাখেন না, বরং আমাদের দোষারোপ করেন যে আমরা স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দিচ্ছি। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, রবিউল ইসলাম অগ্রিম বিক্রির একটি বাস্তবসম্মত সমাধান প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, “কৃষকরা তাঁদের নিজস্ব দলের মধ্যে সঞ্চয় শুরু করতে পারেন, যাতে তাঁরা পাইকারদের অগ্রিম অর্থের পরিবর্তে ঋণ নিতে পারেন”।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, সারোয়ার কাদের বলেন, “যদি ঝুঁকি না নেন, তবে লাভও হবে না।” তিনি মুক্তি কক্সবাজারকে এমন একটি কর্মশালা অয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শুধুমাত্র তখনই বাজার নিয়ন্ত্রকদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেওয়া সম্ভব হবে, যখন কৃষক, পাইকার এবং কৃষি বিভাগ একটি সাধারণ প্লাটফর্মে আসবে। পরিশেষে, সভাপতি সাহেব সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।