মোহাম্মদ নূর, ২০ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা যুবক, যে শিক্ষার আলো এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তার জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। মায়ানমারে জন্মগ্রহণকারী নূর, ২০১৭ সালের সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতা থেকে বাঁচতে, তার বাবা-মা এবং সাত ভাইবোন (তিন ভাই এবং চার বোন) সহ বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। বাস্তুচ্যুত হওয়ার চরম কষ্ট সত্ত্বেও, তিনি কখনো তার লালিত স্বপ্নের পথ হতে বিচ্যুত হন নি।
২০১৮ সালে, তিনি ক্যাম্প-১৭ এ অবস্থিত মুক্তি কক্সবাজার কর্তৃক ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত “অন্বেষণ” শিশু শিখনকেন্দ-৪-এ লেভেল-৩-এ ভর্তি হোন। কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং দৃঢ়তার সাথে তিনি তার পড়াশোনায় দক্ষতা অর্জন করেন। ২০২১ সালে মায়ানমার কারিকুলাম পাইলটিং চালু হলে, তিনি একটি প্লেসমেন্ট পরীক্ষা দেন এবং গ্রেড-৭-এ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। এরপর, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে তিনি ধারাবাহিকভাবে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যথাক্রমে গ্রেড-৮ এবং গ্রেড-৯-এ উন্নীত হোন।
২০২৪ সালে, নূর তার জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেন– একটি নিয়োগ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাকে “অন্বেষণ” শিশু শিখনকেন্দ্র-২-এ একজন রোহিঙ্গা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। শিক্ষক হিসেবে আরোপিত নতুন দায়িত্বের কারণে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না হলেও, তিনি দৃঢ়প্রত্যয়ে ব্যক্তিগতভাবে নিজের শিক্ষাগ্রহণ অব্যাহত রেখেছেন।
একজন আদর্শ শিক্ষক হবার লক্ষ্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নূর, সবসময় বিভিন্ন পেশাগত উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি যৌন শোষণ ও নির্যাতন থেকে সুরক্ষা (পিএসইএ), শিশু সুরক্ষা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও, তিনি তার পাঠদান দক্ষতা উন্নতকরণের জন্য নিয়মিত টিচার্স লার্নিং সার্কেলে অংশগ্রহণ করেন।
নূর এমন একটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন যেখানে তিনি তার কমিউনিটির ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবেন। তিনি বলেন, “আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই, যাতে আমার কমিউনিটিকে শিক্ষিত করতে পারি।” তার হোস্ট শিক্ষক শামীমা আক্তার নূরের সাফল্যে গর্বিত হয়ে বলেন, “একজন শিক্ষক হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো, এটা জানা যে আমার প্রচেষ্টা আমার একজন শিক্ষার্থীর জীবনে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেছে।”
নূরের গল্প শিক্ষা ও অধ্যবসায়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একজন বাস্তুচ্যুত শিক্ষার্থী থেকে একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক হয়ে উঠার এই যাত্রা তার কমিউনিটির জন্য আশা এবং অনুপ্রেরণার প্রতীক।