২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখে, যথাযোগ্য মর্যাদায় মুক্তি কক্সবাজার কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ভাষা শহীদ দিবস-২০২৫ পালিত হয়েছে। দিবস উপলক্ষে প্রভাতফেরীসহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ এবং সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী; প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা বিশিষ্ট আইনজীবী জনাব শিবু লাল দেবদাস; বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শরমীন সিদ্দীকা লিমা এবং সাধারণ পরিষদের সদস্য অধ্যাপক অজিত কুমার দাশ।
সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত এবং ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করার মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং সংস্থার প্রধান নির্বাহী জনাব বিমল চন্দ্র দে সরকার। তিনি ভাষা শহীদ ও জুলাই গণ অভ্যুত্থানে (২০২৪) শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় “মেক ল্যাঙ্গুয়েজেস কাউন্ট ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট”এবং “জুলাই গণ অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ” এর উপর ভিত্তি করে আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারন করেন।
অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন যে, মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন বাঙালি জাতির বিবেক উন্মোচন করে এবং আমাদের মহান স্বাধীনতা-আন্দোলনের বীজ রোপিত হয়। ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতিসত্তার স্বরূপ প্রকাশের আন্দোলন এবং একুশের চেতনা আমাদের ভাষা সাহিত্যের সুদূরপ্রসারী জাগ্রত প্রচেষ্টা। অতএব, দেশের সকল ক্ষেত্রে– মৌখিক ও প্রকাশনায়– শুদ্ধ বাংলা ভাষাকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক উপদেষ্টা এডভোকেট শিবু লাল দেবদাস বলেন, “আমাদেরকে বাংলা ভাষা সঠিকভাবে শেখার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষায়ও দক্ষতা বাড়াতে হবে, তবে অবশ্যই নিজ মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির সঠিক চর্চার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দিতে হবে।” তিনি পরিবারে শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চা, অশোভন ও অশ্লীল শব্দের ব্যবহার থেকে বিরত থাকার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিভিন্নভাবে বাংলা ভাষার বিকৃতি হচ্ছে এবং ক্রমশ বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের একধরনের অভিযোগ তৈরী হচ্ছে। যে ভাষা রক্ষা করার জন্য সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ আরো অনেক বাঙালি জীবন দিয়েছে, তা অবশ্যই আমাদেরকে টিকিয়ে রাখতে হবে বিশুদ্ধ লেখনী ও মৌখিক কথোপকথনের মাধ্যমে।
এছাড়াও, অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মীবৃন্দ। আলোচনা সভার শেষ পর্যায়ে সভাপতি মহোদয় তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, মুক্তি কক্সবাজার মানুষের জন্য কাজ করে, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া নারী ও শিশুদের জন্য। পৃথিবী থেকে অনেক ভাষা হারিয়ে গেছে, তাই বাংলা ভাষার পাশাপাশি অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকেও সংরক্ষণ করতে হবে। এ সময় তিনি সংস্থা কর্তৃক রোহিঙ্গা শিশুদের মাতৃভাষা “হানিফি”র মাধ্যমে পাঠদানে চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি সকলকে মাতৃভাষার বিশুদ্ধ চর্চার প্রতি মনোনিবেশ করতে আহবান জানান।
পরিশেষে, তিনি সকল পর্যায়ের কর্মীদেরকে উক্ত অনুষ্ঠান সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেন।